একজন করদাতাকে তাঁর সব ধরনের আয়ের ওপর কর দিতে হয় না। কোনো কোনো আয় থাকে পুরোপুরি করমুক্ত; আবার কোনো আয়ে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা মেলে। নতুন আইন আয়কর আইনে এমন ২২টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক, কোন কোন আয়ে এমন সুবিধা পাবেন।
১. সরকারি পেনশন তহবিল থেকে করদাতার গৃহীত বা বকেয়া পেনশন;
২. সরকারি আনুতোষিক তহবিল থেকে করদাতার প্রাপ্ত ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত;
৩. কোনো স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, পেনশন তহবিল এবং অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল থেকে তাদের সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা আয়, যাতে ইতিমধ্যে করারোপ করা হয়েছে; ৪. ১৯২৫ সালের ভবিষ্য তহবিল আইনে প্রযোজ্য এমন কোনো ভবিষ্য তহবিলে উদ্ভূত বা উপচিত অথবা ভবিষ্য তহবিল হতে উদ্ভূত আয়;
৫. সরকারি সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সময় এই উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো পরিকল্পনা অনুসারে গৃহীত যেকোনো পরিমাণ অর্থ;
৬. পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট থেকে সুদ হিসেবে গৃহীত কোনো অর্থ বা গৃহীত অর্থের সমষ্টি, যে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয় বর্ষের শেষে ওই সার্টিফিকেটের বিনিয়োগ করা অর্থের মোট পুঞ্জীভূত অর্জিত মূল্য/প্রকৃত মূল/আক্ষরিক মূল্য/ক্রয়মূল্য (অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত);
৭. কোনো নিয়োগকারী কর্তৃক কোনো কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণ যদি ক) ওই ব্যয় সম্পূর্ণভাবে এবং আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সূত্রে খরচ হয়, খ) নিয়োগকারীর জন্য ওই কর্মচারীর মাধ্যমে এমন ব্যয় নির্বাহ সর্বাধিক সুবিধাজনক ছিল;
৮. কোনো অংশীদারি ফার্মের অংশীদার হিসেবে কোনো করদাতা কর্তৃক মূলধনি আয়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত আয়ের অংশ, যার ওপর ওই ফার্ম কর্তৃক কর পরিশোধ করা হয়েছে;
৯. হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে একজন করদাতা যে পরিমাণ অর্থপ্রাপ্ত হন, যার ওপর ওই পরিবার কর্তৃক কর পরিশোধিত; ৪. ১৯২৫ সালের ভবিষ্য তহবিল আইনে প্রযোজ্য এমন কোনো ভবিষ্য তহবিলে উদ্ভূত বা উপচিত অথবা ভবিষ্য তহবিল হতে উদ্ভূত আয়;
১০. বাংলাদেশি কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা কর্তৃক বিদেশে উপার্জিত কোনো আয়, যা তিনি বৈদেশিক রেমিট্যান্স সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশে এনেছেন;
১১. কোনো করদাতা কর্তৃক ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড, ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা পাউন্ড স্টার্লিং প্রিমিয়াম বন্ড থেকে গৃহীত আয়;
১২. রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির আয়, যা কেবল ওই পার্বত্য জেলায় পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত হয়েছে;
১৩. কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির ‘কৃষি থেকে আয়’ খাতের আওতাভুক্ত অনধিক ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় যদি ওই ব্যক্তি ক) পেশায় একজন কৃষক হন, খ) জমি চাষাবাদ থেকে আয় কিংবা সুদ বা মুনাফা বাবদ অনধিক ২০ হাজার টাকা আয় ছাড়া অন্য কোনো আয় থাকে;
১৪. ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিবাসী বা অনাবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তির আয় (আয়ের খাতগুলো হলো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট; সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন; নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন); ডিজিটাল অ্যানিমেশন; ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট; ওয়েবসাইট সার্ভিস; ওয়েব লিস্টিং; আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং; ওয়েবসাইট হোস্টিং; ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন; ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং; ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিক্স; গ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস; আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস; সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস; কল সেন্টার সার্ভিস; ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন; সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস; ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং; রোবোটিকস প্রসেস সার্ভিস; ক্লাউড সার্ভিস; সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন; ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম; ই-বুক পাবলিকেশন; মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস; এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং);
১৫. ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত হস্তশিল্প রপ্তানির আয়;
১৬. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে আয়, শিল্পমালিক নারী হলে বার্ষিক টার্নওভার অনধিক ৭০ লাখ টাকা এবং অন্য ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা;
১৭. শর্তসাপেক্ষে ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তি কর্তৃক জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভূত আয়;
১৮. চাকরি থেকে আয়-এর (যাতায়াত, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত) মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা সাড়ে চার লাখ টাকা, যা কম;
১৯. বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে গৃহীত সম্মানী বা ভাতা প্রকৃতির কোনো অর্থ বা সরকারের নিকট গৃহীত কল্যাণ ভাতা;
২০. সরকার থেকে কোনো পুরস্কারের অর্থ;
২১. বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা থেকে আয়;
২২. ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ যদি বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আনে।
আইনে বলা হয়েছে, করমুক্ত আয় করদাতার মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটি রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে দেখাতে হবে।