Blog

জানুন কিভাবে বৈধ উপায়ে আয়কর কম দেয়া যায়

আয়কর রেয়াত বা আয়কর ছাড় সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই অনেককে বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে। জানুন আয়কর রেয়াতের খাত সমূহ কি এবং কিভাবে আয়কর রেয়াত পাবেন।

স্বল্প আয়ের লোকজন তো বটেই তাছাড়া ধনীরা ও খোঁজেন কিভাবে আয়কর কম দেয়া যায়। যারা চাকরীজীবি তাদের আয়কর তাদের প্রতিষ্ঠান থেকেই উৎসে কর্তন করা হয়।

এ ক্ষেত্রে সঠিক খাতে বিনিয়োগ করলে তাঁদের অন্য কোনো আয় না থাকলে উৎসে কর কর্তনের টাকা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব।

কিছু কিছু খাতে বিনিয়োগ ও দান করলে আয়কর ছাড় বা আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই অনেককে বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে।

যেমন অনেকে মনে করে থাকেন যে, জমি বা ফ্ল্যাট, স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বা আয়কর আইনে অনুমোদিত খাত ছাড়া অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।

আবার অনেকে মনে করেন, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, প্রথম বছর আয়কর রেয়াত গ্রহণ করেছেন, পরের বছর আর কোনো বিনিয়োগ করেননি, এ ক্ষেত্রে পরের বছর বেশি আয়কর আসবে।

কিভাবে আয়কর রেয়াত পাবেন

কর রেয়াত পাওয়ার জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ খাত বা দান খাতে বিনিয়োগ বা দান করতে হবে। এসব খাতে আপনার মোট আয়ের ২৫% শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের জন্য আয়কর রেয়াত পাবেন। এর অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।

আপনার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগ ও দানের পরিমাণের ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাওয়া যাবে। ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে।

কর রেয়াতের হার

মোট বার্ষিক আয় কর রেয়াতের হার
১৫ লক্ষ টাকার কম ১৫%
১৫ লক্ষ টাকার বেশি ১০%

ডিপিএসে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেয়াত পাওয়া যায়, এর বেশি হলে পাওয়া যায় না। ডিপিএস থেকে আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য, আয় বছরের মধ্যে বিনিয়োগ করবেন, শুধু তারাই সেই বছর ওপর রেয়াত পাবেন।

কর রেয়াত পাওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন ফরমের সঙ্গে 24D তফসিল ফরম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।

সঞ্চয়পত্র আয়কর রেয়াত হিসাব করার উদাহরণ

সর্বশেষ আয়কর নির্দেশিকা ২০২১-২০২২ অনুসারে কর রেয়াত বা কর ছাড় হিসাব করার একটি উদাহরণ দেখানো হল।

একটি উদাহরণ দিই, ধরুন, আপনি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আট লাখ টাকা আয় করেছেন। নিজের খরচ বাঁচিয়ে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এক্ষেত্রে আপনার আয়কর, কর রেয়াত ও নীট প্রদেয় করের পরিমাণ হিসাব করা যাক।

আয়করের পরিমাণ

১ম ৩,০০,০০০ টাকার উপর ০% ০ টাকা
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% ৫,০০০ টাকা
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকার উপর ১০% ৩০,০০০ টাকা
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকার উপর ১৫%
যেহেতু আপনার অবশিষ্ট আয়
(৮ লক্ষ – ৩ লক্ষ – ১ লক্ষ – ৩ লক্ষ) = ১ লক্ষ টাকা
সুতরাং ১,০০,০০০ টাকার ১৫%
১৫,০০০ টাকা
মোট আয়কর ৫০,০০০ টাকা

কর রেয়াতের পরিমাণ

বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে ১৫% পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়। সেই অনুসারে আপনার ২,০০,০০০ টাকার ১৫% কর রেয়াত পাবেন যার পরিমাণ হচ্ছে ৩০,০০০ টাকা।

নীট প্রদেয় করের পরিমাণ

উপরের তথ্য ও হিসাব অনুযায়ী আপনার মোট আয়করের পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা
বিয়োগ- কর রেয়াত ৩০,০০০ টাকা
নীট প্রদেয় কর ২০,০০০ টাকা

আয়কর রেয়াতের খাত সমূহ

আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য নিম্মোক্ত মোট ২২ টি বিনিয়োগ খাত ও দান খাতে বিনিয়োগ/ দান করলে সংশ্লিষ্ট বছরে আয়কর রেয়াত পাবেন।

আয়কর রেয়াতের জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ খাতসমূহ

  1. জীবন বিমার প্রিমিয়াম
  2. সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা
  3. স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা
  4. কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা
  5. সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা
  6. যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ
  7. সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ
  8. বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ
  9. বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ।

অনুমোদিত দানের খাত

  1. জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান
  2. যাকাত তহবিলে দান
  3. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোন দাতব্য হাসপাতালে দান
  4. প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান
  5. মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদত্ত দান
  6. আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে দান
  7. আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে দান
  8. আইসিডিডিআরবিতে প্রদত্ত দান
  9. সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপি-এ প্রদত্ত দান
  10. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান
  11. এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ-এ দান
  12. ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে দান
  13. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদান।

শেষকথা

আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে আয়কর ও আয়কর রেয়াত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জেনে বুঝে রিটার্ণ দাখিল করবেন। ৩০ জুনেই বিগত আয় বছর সমাপ্ত হচ্ছে। আপনার কর রেয়াত পাওয়ার জন্য এই সময়ের মধ্যেই আপনাকে বিনিয়োগ বা দান করতে হবে।

তাই হিসাব করে নিন আপনি বিগত আয় বছরে কোথাও বিনিয়োগ বা দান করেছেন কিনা।

তথ্য সূত্র- আয়কর নির্দেশিকা ২০২১-২০২২