মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিয়ে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম, TIN Certificate এর সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিত জানুন।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার, এর সুবিধা-অসুবিধা ও অনলাইন থেকে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বের করা যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
টিন সার্টিফিকেট কি – What is TIN Certificate
আপনি দেশের একজন করদাতা এবং আপনার একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (Tax Identification Number) আছে এরকম একটি সনদকেই টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) বলা হয়।
১০ ডিজিটের টিন নম্বরটি কর প্রদানকারী হিসেবে আপনার একটি পরিচিতি নম্বর যেটি দিয়ে আপনাকে শনাক্ত করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্টান এই TIN Number দিয়ে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারে।
এই টিন নম্বরের মাধ্যমে Taxpayer- করদাতাকে চেনার উপায় হচ্ছে, প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার কর অঞ্চল, মাঝের তিনটি সংখ্যা দ্বারা সেই করদাতার পদমর্যাদা এবং বাকি চারটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার পরিচিতি চিহ্নিত করা হয়।
টিন করা মানেই আপনাকে কর দিতে হবে এমনটি নয়। আপনার আয় করসীমার মধ্যে করসীমার মধ্যে আসলেই তখনি কর পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে টিন সার্টিফিকেট করতে আয়কর অফিসে যেতে হয়না। শুধুমাত্র আপনার মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card) দিয়েই ই টিন করতে পারবেন।
এনআইডি এখনো হাতে না পেলে অনলাইন জাতীয় পরিচয়পত্র কপি ডাউনলোড করতে পারেন বা অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার আবেদন করুন।
কত টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে
টিন থাকলেই আপনাকে কর দিতে হবে না। তবে আপনাকে শুধুমাত্র আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
একজন পুরুষের বাৎসরিক আয় তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বাৎসরিক সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় হলে আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
যদি আয় এর কম বা করসীমার নিচে হয়, তাহলে আয়কর দিতে হবেনা। তবে যদি আপনার টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট থাকে, আপনাকে জিরো রিটার্ণ বা শূন্য বিবরণী জমা দিতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার
শুধু ব্যবসা বা চাকরী নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে (TIN Certificate) টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হয়।
- ব্যবসা শুরু করতে ট্রেড লাইসেন্স নিতে
- গাড়ির মালিক হতে
- সিটি করপোরেশনের অঞ্চলে থাকা কোনো জমি, ফ্ল্যাট বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করতে
- ক্রেডিট কার্ড পেতে
- সঞ্চয়পত্র কিনতে
- কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে
- নিজের কোম্পানি নিবন্ধন করতে
- কোনো পণ্য আমদানির লাইসেন্স নিতে
- মুক্ত পেশাজীবী যেমন হিসাবরক্ষক
- আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের পেশার চর্চা করতে
- নির্বাচনে প্রার্থী হতে
- ব্যবসায়িক সমিতি বা কোনো নিবন্ধিত সংগঠনের সদস্য হতে
- সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার দরপত্রে অংশ নিতে
- রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে গাড়ি দিতে
উপরোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আয় করসীমার মধ্যে না আসলেও, আপনার বাধ্যতামূলকভাবে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন থেকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে একটি টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধাসমূহ
(TIN Certificate) টিন সার্টিফিকেটের প্রথম সুবিধা হলো, আপনি দেশের একজন গর্বিত করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। আপনার আয়কর দিয়ে দেশ চলবে।
এছাড়া টিআইএন থাকার আরো কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা রয়েছে যেমন,
- সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকে আপনার জমাকৃত অর্থের আয় থেকে ১০% কর কর্তন করা হবে। যদি টিআইএন না থাকে ১৫% কর্তন করা হবে।
- ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিতে টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
- বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন পেশাজীবি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়। এসব সুবিধা নিতেও টিআইএন প্রয়োজন হয়।
টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা
টিন সার্টিফিকের একটিই অসুবিধা তা হচ্ছে, আপনার করযোগ্য আয় থাক বা না থাক, আপনাকে প্রতি বছর অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।
যদি রিটান জমা না দিলে আপনার ইনকাম কালো টাকা হিসাবে গণ্য হবে।
যদি পর পর ৩ বছর আপনার করযোগ্য আয় শুন্য হয় বা আপনার বাৎসরিক আয় করসীমার মধ্যে না আসে, আপনি ৪র্থ বার থেকে রিটার্ণ না দিলে চলবে।
তাছাড়া আপনি আপনার আয়কর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম
এখন জানব অনলাইনে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বের করা যায়। আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট ফরম পূরণ করে নিজের ই টিন সার্টিফিকেট তৈরী ও ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া আপনার যদি পূর্বের টিন থাকে তা দিয়েও নতুন ই-টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
অনলাইনে ই টিআইএন নিবন্ধন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ১- একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
টিআইএন করার জন্য ভিজিট করুন- secure.incometax.gov.bd এটি এনবিআর এর ই টিন রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট। মেন্যু থেকে Register লিংকে ক্লিক করুন।
ছবিতে দেখানো, নিচের রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পূরণ করুন
এখানে ই টিন ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট করতে হবে। একাউন্টটি ভবিষ্যতে আপনার কর অঞ্চল পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন বা টিন সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
তাই, একাউন্টের ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড আপনার মনে রাখতে হবে বা একটি নোট খাতায় লিখে রাখুন।
ইউজারনেইমটি ইউনিক রাখার জন্য নাম এবং সংখ্যার মিশ্রণে দিতে পারেন। পাসওয়ার্ড ও নাম ও সংখ্যার মিশ্রণে দিবেন এবং এটি যেন কমপক্ষে ৮ ক্যারেক্টারের হয়।
মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য, আপনার মোবাইলে একটি Activation Code পাঠানো হবে। একাউন্ট সচল (Activate) করার জন্য এটি প্রয়োজন হবে। তাই আপনার ব্যবহৃত এবং চালু আছে এমন একটি নম্বর এখানে ব্যবহার করবেন।
সঠিকভাবে ফর্মটি পূরন করা শেষে Register বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২- এক্টিভেশন কোড ভেরিফিকেশন
এরপর আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে একটি ৬ ডিজিটের Activation Code পাঠানো হবে। কোডটি দিয়ে আপনার একাউন্ট সচল (Activate) করুন।
ধাপ ৩- টিন সার্টিফিকেট আবেদন ফর্ম পূরণ | টিন সার্টিফিকেট তৈরী
একাউন্ট চালু হওয়ার পর, পুনরায় লগ ইন করুন।
লগইন করার পর উপরের মত একটি পেইজ দেখবেন। এখানে বাম পাশের উপর থেকে, Tin Application অপশনে ক্লিক করুন।
এখানে করদাতার ধরণ (Taxpayer’s Status) বাছাই করবেন। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, a) অপশনে Individual Bangladeshi সিলেক্ট করুন। অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনার ধরণ অনুযায়ী একটি অপশন বাছাই করুন।
b) অপশনে, আপনার বয়স ১৮ এর উর্দ্ধে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে, Having NID অপশন বাছাই করুন। যদি, বয়স ১৮ এর নিচে হয়, Minor/ Dependent অপশন বাছাই করুন।
এরপর আপনার আয়ের প্রধান উৎস নির্বাচন করতে হবে। চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে Service, পেশাজীবি যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ইত্যাদি হলে Profession, ব্যবসা হলে Business নির্বাচন করুন।
এরপর আপনার চাকরী, পেশা বা ব্যবসার ধরণ বাছাই করুন। আমি এখানে আয়ের প্রধান উৎস Business (Individual/Firm) দিয়েছি। আমার ব্যবসার লোকেশন Chattogram সিলেক্ট করেছি।
Business Type বা Profession Type অপশনে যদি আপনার ব্যবসা বা পেশার ধরণ খুঁজে না পান, Business Location বাছাই করবেন। Location এর ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়ের অবস্থান অনুসারে এলাকাটি বাছাই করুন।
তারপর নিচের Go to Next বাটনে ক্লিক করে পরে ধাপে যান।
ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা
পরের পেইজে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা চাওয়া হবে। অবশ্যই তথ্যগুলো ইংরেজিতে পূরণ করবেন। (Must write in English)
আপনার নাম, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১৭ ডিজিট) বা স্মার্ট কার্ড নম্বর (১০ ডিজিট) ও জন্মতারিখ যেন অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হয়।
নিচের অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ইংরেজিতে লিখুন। ঠিকানা লিখার পর, Go to Next বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪- টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড
এখানে আপনার Smart NID Card বা NID Card অনুসারে আপনার দেয়া তথ্য যাচাই করা করে সকল তথ্য দেখানো হবে।
I hereby affirm that all information given above is correct and complete and I have not taken any TIN. এই লেখার পাশে টিক দিন এবং Submit Application বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার টিন সার্টিফিকেট তৈরী হয়ে যাবে এবং আপনাকে এর সকল তথ্য দেখানো হবে। পরের পেইজ থেকে View Certificate ও তারপর Save Certificate বাটন ক্লিক করে e Tin Certificate PDF ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ভবিষ্যত প্রয়োজনে আপনি চাইলে এর একটি প্রিন্ট কপি রাখতে পারেন।
আমি টিন সার্টিফিকেট কিভাবে পাবো?
যদি আপনার বয়স ১৮ হয়, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে এবং আয় করে থাকেন, অনলাইনে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন করে কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার ই টিন সার্টিফিকেট পেতে পারেন। দেখুন টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম।
আয়কর রিটার্ন দাখিল
যদি আপনার TIN রেজিস্ট্রেশন করা থাকে, আপনাকে অবশ্যই প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে, আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি কোন ঝামেলা ও হয়রানি ছাড়াই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।