ব্যবসা পরিচালনার জন্য দোকান ঘর ভাড়া দিতে অথবা নিতে প্রতিনিয়তই চুক্তিপত্র করতে হয়। পরবর্তী ঝামেলা এড়াতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি চুক্তিপত্র থাকা একান্ত আবশ্যক। এটি হতে পারে হাতে লেখা অথবা কম্পিউটারে কম্পোজ করা। এ চুক্তিপত্র মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দুই পক্ষের সম্মতিতে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
চুক্তিপত্রের লেখা সম্পর্কে দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়ার স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। কোন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে উভয়পক্ষ মিলে তা আলোচনা করে নেয়া ভাল।
চুক্তিটি হতে হবে ৩’শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। চুক্তিপত্রের লেখা বেশি হলে এর সাথে প্রয়োজন মতো কার্টিজ পেপার সংযুক্ত করা যেতে পারে। চুক্তি ৩’শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের কমে, সাদা কাগজে অথবা শুধু কার্টিজ পেপারে করা উচিত নয়। এটির মূলকপি একটি অথবা দুটিও হতে পারে। যদি একটি মূলকপি করা হয় সেক্ষেত্রে মূলকপিটি ভাড়াটিয়ার কাছে থাকবে। মালিকপক্ষের কাছে থাকবে ফটোকপি। আর যদি দুটি মূলকপি করা হয় তাহলে তা যথাযথভাবে স্বাক্ষর করে দুইপক্ষের কাছেই দুটি কপি রাখা যাবে। তবে চুক্তির নিচে অবশ্যই এ সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ থাকতে হবে। চুক্তিটি কয় পাতার, হাতে লেখা না কম্পোজ করা, সাক্ষী কয়জন, মূলকপি একটি হলে তা কার কাছে আছে প্রভৃতি চুক্তিতে উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয়।
বার্তা২৪.কমের পাঠকদের সুবিধার্থে দোকান ঘর ভাড়ার চুক্তিপত্রের নমুনা দেয়া হলো। এটি একটি জেনারেল ফরমেট। প্রয়োজন অনুসারে এখানে কোন নতুন অনুচ্ছেদ যোগ কিংবা এখান থেকে কোন অনুচ্ছেদ বিয়োগ করা যেতে পারে।
দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র
মো. আবুল হোসেন, পিতা- মো. বাবুল হোসেন, মাতা- মোসা. মরিয়ম বিবি, জন্মতারিখ- ০১/০১/১৯৯০, বর্তমান ঠিকানা: ২২২২/২ নাখাল পাড়া, থানা- তেজগাঁও, জেলা ঢাকা, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম- মোহাম্মদপুর, থানা- দেবিদ্বার, জেলা-কুমিল্রা। পেশা- চাকুরী, জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ০০০০০০০০০০০০০।
————প্রথমপক্ষ/মালিক
মো. আব্দুর রহিম, পিতা- মো. আব্দুল করিম, মাতা- উম্মে কুলসুম, জন্মতারিখ- ০১/০১/২০০০, বর্তমান ঠিকানা: ১১১১/১ উলন রোড, থানা- রামপুরা, জেলা ঢাকা, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম- আলীপুর, থানা- রামগঞ্জ, জেলা- লক্ষ্মীপুর। পেশা- ব্যবসা, জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ০০০০০০০০০০০০০।
———-দ্বিতীয়পক্ষ/ভাড়াটিয়া
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করিয়া অত্র দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের বয়ান লেখা আরম্ভ করিলাম। যেহেতু তফসিল বর্ণিত দোকান ঘরটি অত্র চুক্তিপত্রের প্রথম পক্ষের স্বত্ব খাস দখলীয় সম্পত্তি বটে। সেহেতু প্রথম পক্ষ নিম্ন তফসিল বর্ণিত উক্ত দোকান ঘরটি মাসিক ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করিলে দ্বিতীয় পক্ষ তাতে রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান দেওয়ার জন্য ভাড়া নিতে ইচ্ছা পোষণ করেন।
সে মতে আমরা উভয়পক্ষ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাসিক ভাড়া ১০ হাজার ও অগ্রিম জামানত ১ লক্ষ টাকা ধার্য করিয়া নিম্ন লিখিত শর্তসাপেক্ষে উভয়পক্ষ চুক্তপত্রটি সম্পাদন করিলাম।
-:শর্তসমূহ:-
১। অত্র দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের মেয়াদ হইবে ৫ (পাঁচ) বছর। অর্থাৎ ১/১১/২০২৩ ইং তারিখ হইতে শুরু হইয়া আগামী ৩১/১০/২০২৮ইং তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে। মেয়াদ শেষে উভয়পক্ষ আলোচনাক্রমে অত্র্র চুক্তিপত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি না করিলে মেয়াদান্তে চুক্তিপত্রটি বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
২। দোকান ঘরটির মাসিক ভাড়া ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা ধার্য হইল। যাহা প্রতি ইংরেজি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দ্বিতীয়পক্ষ প্রথমপক্ষকে প্রদান করিবেন।
৩। অগ্রিম জামানত ১,০০,০০০/- (একলক্ষ) টাকা ধার্য করা হইয়াছে। যাহা দ্বিতীয়পক্ষ প্রথমপক্ষকে অদ্য নগদ/পে-অর্ডারের মাধমে বুঝাইয়া দিলেন। অগ্রিম জামানত হইতে মাসিক ভাড়া কর্তন করা যাইবে না। অত্র চুক্তিপত্রের মেয়াদান্তে অথবা অন্য কোনভাবে অত্র চুক্তিপত্রের অবসান ঘটিলে ১৫ দিনের মধ্যে প্রথমপক্ষ দ্বিতীয়পক্ষকে উক্ত জামানত এককালীন বুঝাইয়া দিবেন। তবে কোন কারনে ভাড়া বকেয়া থাকিলে কিংবা অন্য কোনভাবে প্রথমপক্ষ দ্বিতীয়পক্ষের কাছে কোন পাওনা হইলে তাহা জামানত হইতে কর্তন করা যাইবে।
৪। প্রতি মাসের ভাড়াপ্রাপ্তির পর প্রথমপক্ষ দ্বিতীয়পক্ষকে ভাড়ার রশিদ প্রদান করিবেন। অথবা ভাড়া প্রাপ্তির খাতায় যথাযথভাবে তা লিপিবদ্ধ করিয়া দ্বিতীয়পক্ষ তথা ভাড়াটিয়ার স্বাক্ষর নিবেন।
৫। ভাড়াকৃত দোকানে প্রথমপক্ষ বিদ্যুত সংযোগ ও মিটার স্থাপন করিবেন। বিদ্যুত বিল দ্বিতীয়পক্ষ প্রদান করিবেন।
৬। অত্র চুক্তিপত্রটি নবায়নযোগ্য। মেয়াদান্তে অত্র চুক্তিপত্রের প্রথম পাতার পিছনে নতুন করে মেয়াদ নির্ধারণ করে, নতুন ভাড়া উল্লেখ করে উভয়পক্ষের স্বাক্ষর নিতে হবে। অন্যথায় এটি নবায়ন করা হয়নি মর্মে গণ্য হইবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদান্তে অক্ষত অবস্থায় দ্বিতীয়পক্ষ প্রথমপক্ষকে দোকান ঘরটি বুঝাইয়া দিবেন। দোকান ঘরটির কোনরূপ ক্ষতি হইলে তাহা মেরামতের খরচ দ্বিতীয়পক্ষের অগ্রিম জামানত হইতে কর্তিত হইবে।
৭। চুক্তির মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বেই দোকান ঘরটি প্রথমপক্ষের নিজ প্রয়োজনে অথবা ৩ মাসের বেশি দোকান ভাড়া বকেয়া হইলে ২ (দুই) মাসের নোটিশ দিয়ে প্রথমপক্ষ দ্বিতীয়পক্ষকে উচ্ছেদ করিতে পারিবেন। একই সাথে ব্যবসায় মন্দা কিংবা অন্যকোন প্রয়োজনে দ্বিতীয়পক্ষ দোকান ঘরটি ছাড়িয়া দিতে চাহিলে প্রথমপক্ষকে ২ (দুই) মাসের নোটিশ দিয়ে দ্বিতীয়পক্ষ দোকান ঘরটি ছাড়িয়া দিতে পারিবেন।
৮। যে উদ্দেশ্যে দোকান ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে তাহা ব্যাতিরেকে দ্বিতীয়পক্ষ তাহাতে অন্য কোন ব্যবসা পরিচালনা করিতে পারিবেন না। ব্যবসার ধরন পরিবর্তিত হইলে তাহা দ্বিতীয়পক্ষ প্রথমপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করিবেন এবং একটি রিসিভ কপি সংরক্ষণ করিবেন। দ্বিতীয়পক্ষ উক্ত দোকান সাবলেট দিতে পারবেন না।
৯। ভাড়াকৃত দোকানে দ্বিতীয়পক্ষ কোন প্রকার সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম বিরোধী কোন কার্যকলাপ কিংবা কোনরূপ উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে না। এমন কিছু ঘটিলে প্রথমপক্ষ দ্বিতীয়পক্ষকে সরাসরি উচ্ছেদ করিতে পারিবেন। এছাড়া প্রথমপক্ষের অগোচরে কোন প্রকার সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম বিরোধী কোন কার্যকলাপ পরিচালিত হলে এর জন্য প্রথমপক্ষ কোনভাবেই দায়ী থাকবে না।
১০। দ্বিতীয়পক্ষ দোকান ঘরের সরঞ্জামাদি, সাজসজ্জা বা ডেকোরেশন ইত্যাদি নিজ খরচে ও নিজ দায়িত্বে করে নিবেন।
১১। দ্বিতীয়পক্ষ তার ভাড়াকৃত দোকান ঘরটির অনুকুলে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবেন না। কিংবা কাস্টমস বা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ করিতে পারিবেন না।
১২। অত্র চুক্তিপত্র কাটা ছেঁড়া ছাড়া ৩ ফর্দ্দে কম্পোজকৃত, মূল কপি একটি যাহা দ্বিতীয়পক্ষের নিকট থাকিবে। ইহার ফটোকপি প্রথমপক্ষের নিকট থাকিবে এবং ৩ (তিন) জন সাক্ষী বটে।
এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে সুস্থ শরীরে দেহে ও মনে, অত্র চুক্তিপত্র পড়িয়া ও পড়াইয়া উহার মর্ম উপলব্ধি করিয়া সাক্ষিগণের সম্মুখে অত্র চুক্তিপত্রে আমরা উভয়পক্ষ নিজ নিজ নাম স্বাক্ষর করিলাম।
-:তফসিল:-
জেলা- ঢাকা তেজগাঁও থানাধীন নাখালপাড়া লুকাসের মোড়ে অবস্থিত ভাই বোন মার্কেটের নীচ তলায় ৩০০ বর্গফুট আয়তনের ১০ নম্বর দোকান ঘর। যাহার সামনে মার্কেটের গলি, ডানে ভাই ভাই স্টোর, বামে তিন বোন স্টোর ও বরাবর পিছনে রহিম ক্লথ স্টোর।
প্রথমপক্ষের স্বাক্ষর:
দ্বিতীয়পক্ষের স্বাক্ষর:
সাক্ষীগণের স্বাক্ষর:
নাম:
পিতার নাম:
ঠিকানা
এনআইডি নাম্বার:
মোবাইল