Blog

ট্রেড লাইসেন্স কি, কেন ও কিভাবে করবেন?

Table of Contents

ট্রেড লাইসেন্স কি?

ট্রেড লাইসেন্স “Trade Licence” এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “বাণিজ্য করার অনুমতি পত্র” যার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কোন ব্যক্তিকে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে বৈধ ভাবে কোন ধরনে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে এই লাইসেন্সটি করে রাখতে হবে।

এই লাইসেন্সটি স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ অনুসারে হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত যে, স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ এর তিনটি আইন আছে ১. সিটি কর্পোরেশন ২.পৌরসভা ৩. ইউনিয়ন পরিষদ। (এই রচনায় সাধারণ ভাবে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ নিয়ে সাধারণ ভাবে আলোচনা করা হল বাকি দুটির ক্ষেত্রেও একই ধরনের নিয়ম প্রযোজ্য )। স্থানীয় সরকার এই ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে তার অনেক ব্যয় নির্বাহ করে। এই ট্রেড লাইসেন্স পেতে বেশ কিছু নিয়ম ও শর্ত মানতে হয় এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদন করার পর এই লাইসেন্স পাওয়া যায়।

কেন ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে?

বাংলাদেশের যে কোন স্থানে ব্যবসা করতে হলে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে, ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কেউ নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করতে পারে না, উপরন্তু তার ব্যবসায়ী কার্যক্রম অবৈধ হয় এবং তার জন্য সাজা হতে পারে। তাই কোন ব্যবসার করার প্রথম শর্ত হচ্ছে তার ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। তাছাড়া আপনি আপনার ব্যবসা একটু বড় করতে চাইলে, উন্নতি করতে চাইলে ব্যবসার প্রয়োজনে কোন লাইসেন্স করতে চাইলে বা কোন একাউন্ট খুলতে চাইলে (যেমন আই আর সি, ই আরসি, ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদি) আপনাকে আপনার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আপনি আইনগত ভাবে একজন ব্যবসায়ী হতে পারবেন না এবং কোথাও কোন ধরনের ব্যবসায়ী সুযোগ সুবিধাও পাবেন না।

Municipal Corporation Taxation Rules, 1986 এর ৪২ ধরায় বলা হয়েছে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন কোন ব্যবসা, পেশার ক্ষেত্রে Municipal Corporation ট্যাক্স বা কর আদায় করতে পারবে আর এই ট্যাক্স বা কর আদায় করার জন্যই এই স্থানীয় সরকার ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। এই আইনের সূত্র ধরেই পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর দ্বিতীয় অধ্যায় এ বলা হয়েছে যে সিটি কর্পোরেশন যে কোন ধরনের ব্যবসার কর আরোপ করতে পারে। এই দুটিই সূত্র হচ্ছে মূলত ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তি।

ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে এবং ট্রেড লাইসেন্স রিনিউয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কর আদায় করে থাকে এবং সেই স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ এলাকায় বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করে থাকে। কেউ ট্রেড লাইসেন্স না করে কোন এলাকায় ব্যবসা করলে সেটা অবৈধ হবে এবং তার জন্য জেল জরিমানাও হতে পারে।

Trade License Dhaka - ট্রেড লাইসেন্স

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স

স্থানীয় সরকার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয়ের স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ এর চতুর্থ তফসিল অনুসারে লাইসেন্সর বা অনুমতি দিয়ে থাকে এবং কর আদায় করে থাকে। যারা নতুন উদ্যোক্তা তাদের ধারনা প্রদানের জন্য নিচের লিস্ট টি দেয়া হল:

(১) ইমারত ও জমির বার্ষিক মূল্যের উপর কর ।
(২) স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর কর।
(৩) ইমারত নির্মাণ এবং পুনঃ নির্মাণের জন্য আবেদনের উপর কর ।
(৪) নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানির উপর কর।
(৫) নগর হইতে পণ্য রপ্তানির উপর কর।
(৬) টোল জাতীয় কর।
(৭) পেশা বা বৃত্তির উপর কর।
(৮) জন্ম, বিবাহ, দত্তক গ্রহণ ও যিয়াফত বা ভোজের উপর কর।
(৯) বিজ্ঞাপনের উপর কর।
(১০) পশুর উপর কর।
(১১) সিনেমা, ড্রামা ও নাট্য প্রদর্শনী এবং অন্যান্য আমোদ প্রমোদ এবং চিত্তবিনোদনের উপর কর ।
(১২) মটোর গাড়ী এবং নৌকা ব্যতীত অন্যান্য যানবাহনের উপর কর ।
(১৩) বাতি ও অগ্নি রেইট।
(১৪) ময়লা নিষ্কাশন রেইট।
(১৫) জনসেবামূলক কার্য সম্পাদনের জন্য রেইট।
(১৬) পানি কল ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য রেইট।
(১৭) সরকার কর্তৃক আরোপিত করের উপর উপকর।
(১৮) স্কুল ফিস।
(১৯) কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত কোন জনসেবামূলক কার্য হইতে প্রাপ্ত করের উপর ফিস।
(২০) মেলা, কৃষি প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য জনসমাবেশের উপর ফিস।
(২১) বাজারের উপর ফিস।
(২২) কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স, অনুমদোন ও অনুমতির জন্য ফিস।
(২৩) কর্পোরেশন কর্তৃক কৃত কোন বিশেষ কার্যের জন্য ফিস।
(২৪) পশু জবাই দেওয়ার জন্য ফিস।
(২৫) এই আইনের যে কোন বিধানের অধীনে অনুমোদিত অন্য যে ।
(২৬) সরকার কর্তৃক আইন বলে আরোপণীয় অন্য কোন কর ।

কোন বিষয়ে কেমন কর, কেমন খরচ এই লেখাটির পরবর্তী অংশে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ট্রেড লাইসেন্স না করার সাজা

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯২ ধরায় বলা হয়েছে পঞ্চম তফসিল অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি অপরাধ করে থাকে তবে তাকে সাজা পেতে হবে, এদিকে পঞ্চম তফসিলে ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া ও কর ফাঁকি দেওয়াকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ট্রেড লাইসেন্স না করা, রিনিউ না করা ও কর ফাকি দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৯৩ অনুসারে কোন ব্যক্তি ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে / রিনিউ না করে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাকে প্রথমবার / প্রথম দিনের জন্য ৫০০০ হাজার টাকার জরিমানা করতে পারে এবং পরবর্তী প্রতিবার / প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা করে জরিমানা করতে পারে। এই জরিমানা থেকে বাঁচতে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে। আর জরিমানা প্রদান না করলে তার নামে মামলা হতে পারে।

আবার, যদি কেউ ট্রেড লাইসেন্স না করে ব্যবসা পরিচালনা করে বা নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয় সেটা প্রতারণার সামিল হবে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হতে পারে, তাছাড়াও অন্য দেওয়ানী বা ফৌজদারি মামলাও হতে পারে।

তাই ট্রেড লাইসেন্স করার কোন বিকল্প নেই।

কোন ধরনের ব্যবসার জন্য বা কি থাকলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে?

সকল ধরনের ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে, আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য নিচে একটা লিস্ট দেয়া হল:

  • স্বত্বাধিকারী বা প্রোপাইটারশিপ ব্যবসা
  • পার্টনারশিপ ব্যবসা
  • কোম্পানির
  • কোন ধরনের ব্যবসার ব্রাঞ্চ অফিস খোলার জন্য
  • ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতাল
  • ছাপাখানা
  • আবাসিক হোটেলের
  • রিক্রুটিং এজেন্সির
  • অস্ত্র ও গোলাবারুদের
  • ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে
  • কোন ধরনের ফ্যাক্টরি
    • কোন ধরনের অফিস‌‌ং
  • আমদানি – রপ্তানি বা সরবারহকারী – ইত্যাদি

কিভাবে ও কোথায় ট্রেড লাইসেন্স করা যায়?

ট্রেড লাইসেন্স মূলত স্থানীয় সরকার প্রদান করে থাকে যেমন, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা কিংবা জেলা পরিষদ। আপনি আপনার ব্যবসা যেখানে [যেই স্থানীয় সরকারের অধীনে] পরিচালন করবেন আপনাকে সেই স্থানীয় সরকারের থেকে [সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা কিংবা জেলা পরিষদ] ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য যে আপনি একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সারা দেশে ব্যবসা করতে পারবেন তবে আপনি যদি আপনার প্রাথমিক ভাবে লাইসেন্স প্রাপ্ত স্থান ছাড়াও অতিরিক্ত কোন অফিস বা ব্যবসার জন্য স্থান নিয়ে থাকেন তবে আপনে অবশ্যই সেখানকার ট্রেড লাইসেন্স ও নিতে হবে।

ঢাকা শহরে আপনি কোন অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিবেন?

ঢাকা শহরের জন্য, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) এই সেবা প্রদানের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কতগুলো অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, ঐ অঞ্চলের অফিস থেকেই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

ঢাকায় ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?

আমরার জানি ব্যবসা নানান ধরনের হয় নানান পর্যায়ের হয় তাই একেক ধরনের ব্যবসায় একেক ধরনের কাগজপত্র লাগে। সাধারণত প্রেপাইটরশিপ বা স্বত্বাধিকারী ব্যবসায় যা লাগে তা বাকি সবক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় সাথে বিশেষ বিশেষ ব্যবসার জন্য বিশেষ বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, চলুন কোন ধরনের ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি কাগজপত্র তা একটু সবিস্তারে দেখে নেই।

প্রোপাইটরশিপ / স্বত্বাধিকারী ব্যবসা (সাধারণ ব্যবসা) ক্ষেত্রে:

  • দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোদের এর ফটোকপি।

মনে রাখতে হবে এই দোকান বা স্থানটি অবশ্যই বাণিজ্যিক বিল্ডিং এ হতে হবে। সাধারণত কোন এলাকায় ভবন দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়, ১. আবাসিক ২. বাণিজ্যিক; বাণিজ্যিক ভবনের / স্থানের ভাড়া, বিল ইত্যাদি সাধারণত আবাসিকের চেয়ে একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে ব্যবসার জন্য অবশ্যই বাণিজ্যিক স্থান নিতে হবে নয়তো আইনত আপনি ট্রেড লাইসেন্স পাবেনা। যে কোন ধরনের ব্যবসাই বাণিজ্যিক স্থানে পরিচালনা করতে হবে, হোক প্রোটাইটরশিপ, কোম্পানি বা পার্টনারশিপ

  • আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
  • ভোটার আইডি কার্ড

পার্টনারশিপ বা অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে:

  • দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্সপরিশোদের এর ফটোকপি।
  • ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপ বা অংশীদারি কারবারের চুক্তিপত্র
  • ম্যানেজিং পার্টনারের ৩ কপি ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড

কোম্পানির ক্ষেত্রে:

  • দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি বা নিজের দোকান/ স্থান হলে ইউটিলিটি বিল এবং হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্সপরিশোদের এর ফটোকপি।
  • কোম্পানির সনদ / সার্টিফিকেট অব ইন-কর্পোরেশন
  • মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন
  • ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ৩ কপি ছবি ও তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি

ফ্যাক্টরির/কারখানা এর ক্ষেত্রে

  • প্রোপাইটারশিপ, পার্টনারশিপ বা কোম্পানির ডকুমেন্ট (ব্যবসার ধরন অনুযায়ী) এবং সাথে –
  • পরিবেশের ছাড়পত্রের কপি ।
  • প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার বিবরণসহ নকশা/লোকেশন ম্যাপ।
  • প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি/কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান/স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা ।
  • ফায়ার সার্ভিস এর ছাড়পত্র ।
  • ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর নিয়ম – কানুন মেনে চলার অঙ্গিকার-নামা ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এ স্বাক্ষরিত।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স:

  • প্রোপাইটারশিপ, পার্টনারশিপ বা কোম্পানির ডকুমেন্ট (ব্যবসার ধরন অনুযায়ী) এবং সাথে –
  • পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র
  • প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র
  • অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র
  • ডি.সি.সি. র নিয়মাবলী মেনে চলা হবে এমতে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র
  • ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

এ ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে

প্রথমত, আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী (প্রোপাইটরশিপ, পার্টনারশিপ বা কোম্পানি হলে) সে সংক্রান্ত দলিল / ডকুমেন্টে / কাগজপত্র সাথে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অনুমতি।

  • ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন।
  • ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে: ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি
  • রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে: মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স
  • অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে: অস্ত্রের লাইসেন্স
  • ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে: ড্রাগ লাইসেন্সের কপি
  • ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে: সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি

ট্রেড লাইসেন্স করতে কেমন খরচ হয়?

একেক ধরনের ট্রেড লাইসেন্স করতে একেক রকমে খরচ হয়। লাইসেন্সর ধরন ও কোন স্থানে লাইসেন্স করছেন তার উপর ভিত্তি ট্রেড লাইসেন্সের খরচ নির্ভর করে।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন এক ধরনের ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে সাধারণত ৬ – ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তবে কেউ যদি এক নামে একাধিক ধরনের ব্যবসা করতে চায় তবে ধারণ অনুসারে খরচ সংযুক্ত হবে। তবে কেউ যদি কোম্পানি খোলে তবে সে সকল ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্সের অধীনেই স্বল্প খরচে করতে পারবে।

যে কোন ধরনের কোম্পানি করতে আমাদের সাথে যোগযোগ করতে পারেন, দেখুন, কিভাবে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন বা নিবন্ধন করবেন?

কোন ধরনের ট্রেড লাইসেন্সের খরচ কেমন হবে তা নির্ভর করে ব্যবসার উপর আর খরচের হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ আইন অনুসারে। এই আইনে ঢাকা শহরে কোন ট্রেড লাইসেন্স করতে কত খরচ হবে তা সুন্দর করে দেয়া আছে যার থেকে আপনি সরকারি মূল ফি কত হবে তা বুঝতে পারবেন। তবে এই ফি এর সাথেও আরো কিছু ফি ও খরচ যোগ হয় যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

এই মূল খরচ ছাড়াও আপনার সাইনবোর্ড ফি (আয়তন অনুসারে), লাইসেন্স বই ফি ও এগুলো উপর ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হবে।

বাস্তব অভিজ্ঞতা

এইতো গেল আইনের কথা, কিন্তু বাস্তবতায় আরো কিছু খরচ আপনাকে দিতে হবে। ধরতে পারেন সরকারী খরচের দ্বিগুণ আর যদি আপনি বিষয়টি না বোঝেন, নেগোশিয়েশন না করতে পারেন বা কোন কাগজপত্র ম্যানেজ না করতে পারেন তবে এই খরচ ৩ থেকে ৪ গুন পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া আপনাকে এক বা একাধিক দিন ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ও কাগজপত্রের জন্য ঘোরাঘুরি করতে হতে পারে যা আপনার খরচ আরো কিছু বাড়িয়ে দিবে।

তবে আপনি চাইলে একই বা কম খরচে, তুলনামূলক ভাবে দ্রুত ও ঝামেলা বিহীন ভাবে আমাদের মত ট্রাষ্টেড কোন সোর্সকে কাজটি দিতে পারেন। যে কিনা আপনার ব্যবসায় পরামর্শ দিয়ে ও আপনার হয়ে কাজ করে দিয়ে আপনার আপনার সময়, শ্রম ও অর্থ বাচাতে সাহায্য করবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার ধাপ / প্রক্রিয়া

আপনি নিজেই যদি আপনার ট্রেড লাইসেন্স করতে চান (যেটাই সর্বোত্তম) তবে আপনাকে ধাপে ধাপে ট্রেড লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

প্রথম ধাপ: উপযুক্ত অফিস খুঁজে বেড় করা
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি কোন স্থানীয় সরকারের কোন অফিসের আওতায় পড়েছে।

দ্বিতীয় ধাপ: ফর্ম সংগ্রহ
ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য দুটি ভিন্ন ধরনের ফরম রয়েছে। ফরমগুলো ‘আই ফরম’ ও ‘কে ফরম’ নামে চিহ্নিত প্রতিটি ফরমের দাম ১০ টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি ছোট বা সাধারণ হয়, তবে ‘ফরম আই’ আর বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে ‘কে ফরম’ নিতে হয়। আপনার প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত, ওই অঞ্চলের অফিস থেকেই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

তৃতীয় ধাপ: ফর্ম, তথ্য ও দলিল জমা প্রদান
এই ধাপে আপনার ব্যবসার ধরন অনুসারে প্রয়োজনীয় তথ্য, দলিল ইত্যাদি সহ ফর্মটি জমা দিতে হবে।

চতুর্থ ধাপ: টাকা জমা প্রদান
এই ধাপে আপনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফি ও ভ্যাট জমা প্রদান করতে হবে।

পঞ্চম ধাপ: পরিদর্শন
এই ধাপে আপনার স্থানীয় সরকারের একজন অফিসার বা তার দ্বারা ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করবেন এবং চেক করে দেখবেন যে, ব্যবসার ধরন, আয়তন, ঠিকানা ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা।

ষষ্ঠ ধাপ: ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ
আপনার পূর্ববর্তী সকল কিছু ঠিক থাকলে আপনি এই ধাপে এসে ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।

ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স

অনেকের প্রশ্ন থাকে যে ই-কমার্স সাইট বা অনলাইন বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া প্রয়োজন হবে কি না? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ অনলাইন বিজনেস বা ই-কমার্স বা এফকমার্স বিজনেসের জন্যও ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। আপনি চাইলে যে কোন যায়গা থেকে একটা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এই বিজনেস পরিচালনা করতে পারেন তবে, যদি আপনার কোন অফিস, ওয়ার হাউস, ডেলিভারি হাব বা অন্য কোন ব্যবাসায়ীক স্থান থাকে তবে সেই স্থানীয় সরকার থেকেও ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

ই-কমার্সের বা এফকর্মাসের জন্য কোন ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স নিবেন?

ই-কমার্সের বা এফকর্মাসের জন্য কোন ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স নিবেন সেটা নিয়ে অনেকের কনফিউশন থাকে। আসলে দ্বিধা-দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিছু নেই আপনি যেই পণ্যটা অনলাইনে বিক্রি করছেন সেই পণ্যের শপে বিক্রি করলে যেই ক্যাটাগরিতে যেত আপনি সেই ক্যাটাগরিতে ট্রেড লাইসেন্স নিবেন। মনে রাখবেন ই-কমার্স মানে আপনি আপনার ব্যবসাটা অনলাইনে করছেন। ই কমার্স মানেই আইটি ব্যবসা না। তবে আপনার প্রধান সেবা যদি মার্কেট প্লেস তৈরি করা হয় বা ডিজিটাল সেবা, তথ্য সেবা ইত্যাদি প্রদান করে থাকেন তবে আইটি সিলেক্ট করতে পারেন। আইটি-ই হতে হবে এমন কোন কথা নেই।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

মনে রাখতে হবে, ট্রেড লাইসেন্স শুধু করলেই হবে না প্রতিবছর এই ট্রেড লাইসেন্সটি রিনিউও করতে হবে।

প্রতিবছর জুলাই মাসে আপনাকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি কবে ট্রেড লাইসেন্স করেছেন সেটা হিসাব করে কোন লাভ নেই, প্রতিটি নতুন অর্থবছরে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স নতুন করে নবায়ন করতে হবে।

রিনিউ করার জন্য আপনার একই খরচ ও ভ্যাট পড়বে সাথে যোগ হবে ৩০০০ টাকা উৎস ফি (এই ফি টা প্রায় সময়েই পরিবর্তন হয় তাই প্রদান করার আগে একটু খোজ খবর নিয়ে করতে হবে)। আর কিছু অতিরিক্ত খরচ-তো আছেই।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করলে কি হবে?

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করলে সেটি নিজে নিজেই বাতিল বা বন্ধ হবে না উপরন্তু প্রতি মাসের জন্য আপনাকে প্রতি মাসে ১০% হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে। তাই আপনি যদি ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ না করেন বা নবায়ন না করেন তবে আপনি অনেক ফাইনের সম্মুখীন হবেন।

ধরুন আপনার ট্রেড লাইসেন্স ফি ১০০০০ টাকা এবং আপনি ট্রেড লাইসেন্স ৬ মাস নবায়ন করলেন না তাহলে আপনাকে মূল ফি ১০০০০ টাকা এবং ৬ মাসের ফাইন ৬০০০ টাকা সহ মোট ১৬০০০ টাকা দিয়ে লাইসেন্সটি নবায়ন করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ করা

অনেকেই অনেকদিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেননা। অনেকেই ভাবেন, “ধুর ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ না করলে আর কি হবে, লাগলে নূতন একটা খুলে ফেলব” তবে এই ভুলটি করতে যাবেন না। আপাতত আপনার মনে হতে পারে এমনটি করলে সমস্যা নেই কিন্তু পরবর্তীতে আপনি আইনি ঝামেলায় পরবেন।

আপনি কোন কারণে ট্রেড লাইসেন্সটি আর চালু রাখতে চাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের কর কর্মকর্তার একটি আবেদন দিয়েই আপনার লাইসেন্সটি বাতিল করতে পারেন। আর এর জন্য অতিরিক্ত কোন খরচেরও প্রয়োজন নেই।

আবেদনের নমুনা:

বরাবর
কর কর্মকর্তা
রাজস্ব বিভাগ, অঞ্চল-২ (মিরপুর)
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

বিষয়: ট্রেড লাইসেন্স বন্ধ করার জন্য আবেদন

জনাব,
সবিনয়ে নিবেদন এই যে, আমি “ওক্স” রোড, ১০, প্লট ৩, মিরপুর ২ এর “ওয়াই” ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারই, ট্রেড লাইসেন্স নং ১২৮৫২ যা ইস্যু তারিখ ২০.১০.২০ যার সকল কর পরিশোধিত ও আপডেট আছে, বর্তমানে আমি আর আমার ব্যবসা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক না তাই আমি আমার ট্রেড লাইসেন্সটি বন্ধ করতে চাচ্ছি।

অতএব জনাবের নিকট আমার আকুল আবেদন, আকে উক্ত লাইসেন্সটি বন্ধ করত বাধিত করবেন।

তারিখ: ২১ জুন ২০২১

বিনীত নিবেদক

(স্বাক্ষর)
পাভেল আহমেদ

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাজে লাগবে। ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি, ভ্যাট, ট্যাক্স বা যে কোন ধরনের লাইসেন্স বা আইনি সহযোগিতার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।